ফেসবুক বুস্ট করার নিয়মগুলো অনেকেই ঠিকঠাকভাবে অনুসরণ করে না। ফলে বুস্ট সেট করার সময় ভুল অপশন সেট করে অনেকে অপ্রয়োজনীয় ডলার খরচ করে থাকে। বর্তমান সময়ে যদি আপনার কাছে একটি ডুয়েল কারেন্সির কার্ড আর একটি ফেসবুক পেজ থাকে, তাহলে নিজেই ফেসবুক বুস্টিং সেট করতে পারবেন।
শুধু কিছু নিয়ম আপনাকে জানতে ও অনুসরণ করতে হবে।
ফেসবুক বুস্ট করার নিয়মকে ১০টি ধাপে ভাগ করা যায়। যা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
Table of Contents
ধাপ-১ ফেসবুক পোস্ট রেডি করা

একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করার পর পেজের সকল সেটিং ঠিক করতে হবে। তারপর পেজে ছবি বা ভিডিও আকারে পোস্ট করতে হবে। বিভিন্ন রকমের ফেসবুক এড ফরমেট আছে। আপনি প্রয়োজনীয় একটি এড ফরমেট আপনার ফেসবুক পেজে পোস্ট করবেন।
পোস্টে অবশ্যই অর্থযোগ্য ক্যাপশন থাকতে হবে। পোস্টের ছবি ও ক্যাপশন ভালোভাবে অপটিমাইজ করে নিতে হবে।
ধাপ-২ Boost Post এ ক্লিক করা

ফেসবুক বুস্ট করার জন্য যে পোস্টটি নির্বাচন করা হবে, সেটির নিচের ডান দিকে ‘Boost Post’ নামে একটি নীল রঙের বাটন রয়েছে। সেখানে ক্লিক করতে হবে।
যদি আপনার ফেসবুক পেজটি বুস্টিং এর জন্য উপযুক্ত হয় তাহলে ক্লিক করার সাথে সাথে একটি নতুন সেটিং পেজ আসবে। এই সেটিং পেজটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
ধাপ-৩ Goal সেট করা

গোল সেকশনের চেঞ্জ বাটনে ক্লিক করুন। চারটি গোল দেখাবে। সেগুলো হলো-
- Get More Engagement মানে হল পোস্টে বেশি বেশি রিচ,লাইক ও কমেন্ট পাওয়া, যাতে ব্যবসার ভালো প্রচার হয় ও বহু মানুষ এডটি দেখতে পারে।
- Get More Website Visitors মানে হলো ওয়েব সাইটে ট্রাফিক ঢোকানো বা বাড়ানো।
- Get More Message মানে হল বেশি বেশি মেসেজ পাওয়া, যাতে কাস্টমারদের সাথে কথা বলে পণ্য বিক্রি করা যায়।
- Atomatic মানে হলো ফেসবুক কোম্পানি আপনার পোস্টের ধরন অনুযায়ী রেসপন্স এনে দিবে।
এই ৪টি গোলের মধ্যে আপনার পছন্দের গোল সেভ করুন।
Get More Message বুস্টের নতুন আপডেট-
মেসেজ গোল সিলেক্ট করলে শুধু ৩টি কাজ অতিরিক্ত করতে হবে-
১. গোলের পর Ad creative অপশনের Headlines এ একটি ছোট ক্যাপশন দিতে হবে। যেমন- Order Now, Inbox us ইত্যাদি।
২. Messaging নামে একটি নতুন সেকশন পাবেন। সেখানে Message Template এ ৩টি অপশন পাবেন-
- Greetings বা শুভেচ্ছা বার্তা তৈরি করুন।
- Messaenger Call Option অন করতে পারেন। এতে কাস্টমার সরাসরি আপনার পেজে কল দিতে পারবে।
- একটি অটো-মেটিক প্রশ্ন উত্তর সেট করে দিতে পারেন।
৩. Apps নামে একটি সেকশন থাকবে। পেজের ইনবক্সে মেসেজ পেতে হলে Messenger সিলেক্ট করবেন। আর What’s app এ মেসেজ পেতে চাইলে, সেটা সিলেক্ট করবেন।
ধাপ-৪ Advantage+Creative ও Special Ad Categories

- advantage+Creative অপশন অন রাখা। কারণ এটি অন থাকলে ফেসবুক আপনার এডটিকে বিভিন্ন ভেরিয়েশন বা ফরমেটে বিভিন্ন জায়গায় প্লেস করবে, যাতে টার্গেটেড মানুষজন আপনার এডটি দেখতে পায়।
- যেহেতু আপনি স্বাভাবিকভাবে পণ্য বিক্রি বা ব্যবসায়ের প্রচারের জন্য ফেসবুক বুস্ট করছেন, তাই Special Ad Categories অফ রাখবেন। যারা রাজনৈতিক, চাকরি ও ব্যাংকিং-রিলেটেড এড দেয় তারাই শুধু এই অপশনটি চালু রাখতে পারবে।
ধাপ-৫ Audience নির্বাচন

চারটি বিষয়ের সমন্বয়ে অডিয়েন্স গঠন করতে হয়। সেগুলো হলো- Gender, Age, Location এবং Detailed Targeting।
- প্রথমে অডিয়েন্স সেকশনে গিয়ে ক্রিয়েট অডিয়েন্স ক্লিক করে অডিয়েন্সের যে কোন একটি নাম দিবেন।
- তারপর Gender থেকে All, Man, Woman এর মধ্যে যেকোনো একটি সিলেক্ট করবেন।
- Age অপশন থেকে কত থেকে কত বছর বয়সীদের অ্যাড দেখাবেন- সেটা সিলেক্ট করবেন।
- Location অপশনে, ম্যাপ থেকে নির্ধারিত জায়গা ড্রপ পিন করবেন। যদি সারা বাংলাদেশে দেখাতে চান, তাহলে লোকেশন বক্সে বাংলাদেশ লিখে ‘Bangladesh Country’ সিলেক্ট করবেন।
- Detailed Targeted অপশনে তিনটি বিষয় রয়েছে। Demographic, Interest ও Behaviour। এখান থেকে পছন্দের কিওয়ার্ডগুলো সিলেক্ট করবেন।
ধাপ-৬ ডিউরেশন ও বাজেট

এই সেকশনে ফেসবুক বুস্টের খরচ ও দিন নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ কত দিনের জন্য বুস্ট চলবে এবং মোট বাজেট কত হবে, তা নির্ধারণ করবেন। যেমন-
- ৩ দিনের জন্য ৫ ডলার
- ৪ দিনের জন্য ১০ ডলার
- ৭ দিনের জন্য ৩০ ডলার ইত্যাদি।
ধাপ-৭ Placement নির্ধারণ

আপনার এডটি ফেসবুকের যে যে স্থানে দেখানো হবে সেটিই হল Placement বা স্থান।
ফেসবুকের অনেক Placement এর জায়গা রয়েছে। যেমন- facebook Feed, Messenger, Instagram, Facebook Marketplace, Reel, in video ইত্যাদি।
এখানে আপনি ম্যানুয়ালি সিলেক্ট করতে পারেন অথবা ফেসবুকের রিকমান্ডেড অপশন অন রাখতে পারেন।
ধাপ-৮ মেটা পিক্সেল

আপনার যদি ওয়েবসাইট থাকে এবং ওয়েবসাইটে প্রচুর ভিজিটর থাকে, তাহলে এই অপশনটি আপনার জন্য। শুধুমাত্র ওয়েবসাইটের ভিজিটরদের রিটার্গেট করতে এই অপশনটি ব্যবহার করা হয়।
আর যদিও বা আপনার ওয়েবসাইট থাকে কিন্তু ভিজিটর খুবই কম অথবা ওয়েবসাইট একেবারেই না থাকে, তাহলে Meta Pixel অপশনটি অফ রাখবেন।
ধাপ-৯ পেমেন্ট মেথড

আপনার ডুয়েল কারেন্সির মাস্টার বা ভিসা কার্ড এখানে এড করবেন। কার্ডের সকল তথ্য দিয়ে কার্ডটি সেভ করবেন। কার্ডটি তে অবশ্যই ডলার ভরে রাখবেন।
কারণ ফেসবুকে কার্ড সেভ হওয়ার সাথে সাথে ফেসবুক কোম্পানি ১ ডলারের মত একটি বিল কেটে নিবে যা পরবর্তিতে আবার ফেরত দিয়ে দিবে। এটি করা হয় অটো পেমেন্ট সিস্টেম চেক করার জন্য।
বাংলাদেশের বাইরে হলে পেপাল একাউন্ট এড করতে পারেন।
ধাপ-১০ Publish বাটনে ক্লিক

উপরের সবকিছু একবার ভালোভাবে চেক করে Publish বাটনে ক্লিক করবেন। ক্লিক করার পর পোস্টটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ রিভিউতে রাখবে। তারপর তারা ভালো করে চেক করবে ও যাচাই করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার এডটি ১০ মিনিট থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এক্টিভ করে দিবে।
ফেসবুক বুস্ট চালু হওয়ার পর করনীয়-
- অ্যাড চালু হওয়ার পর একটি নোটিফিকেশন আসবে। কম্পিউটার দিয়ে চলমান ফলাফল দেখতে হলে, ফেসবুক পেজে ঢুকবেন। তারপর Ad Centre অপশনে ক্লিক করবেন। সেখানে এড এর ফলাফল দেখতে পারবেন।
- মোবাইলে চলমান ফলাফল দেখতে হলে, ফেসবুক অ্যাপ এ ঢুকে যে পোস্টটি বুস্ট করেছেন সেটিতে ক্লিক করবেন। অথবা Meta Ads নামে মোবাইল অ্যাপ Play Store থেকে ডাউনলোড করে এডের চলমান অবস্থা দেখতে পারবেন।
সর্বশেষ,
ফেসবুক বুস্ট করার জন্য এই নিয়ম গুলো ফলো করলে আপনি নিজেই অ্যাড সেট করতে পারবেন। এই দশটি নিয়ম ভালোভাবে অনুসরণ করুন এবং ফেসবুক বুস্ট নিজেই করে ফেলুন।
তবে যদি কোনো কারনে নিজে এড রান করতে না পারেন, তাহলে ভালো কোন এজেন্সির কাজ থেকে ফেসবুক বুস্টিং সার্ভিস নিতে পারেন।