ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার রোডম্যাপ

ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায়

ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য নির্দিষ্ট ধাপে এগোনো গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি বিশাল ক্ষেত্র যেখানে বিভিন্ন কৌশল ও টুলসের সমন্বয়ে অনলাইন ব্যবসা এবং ব্র্যান্ডগুলো উন্নতি লাভ করে। আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান, তাহলে আপনাকে কন্টেন্ট তৈরি, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM), সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO), পে-পার-ক্লিক (PPC), ইমেইল মার্কেটিং এবং বিশ্লেষণাত্মক টুলসের ব্যবহার শিখতে হবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং দক্ষতা অর্জনের জন্য ধারাবাহিক অনুশীলন এবং বাস্তব প্রজেক্টে কাজ করাই হলো সফলতার মূল চাবিকাঠি।

ধাপ-১: কন্টেন্ট তৈরি শেখা

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কন্টেন্ট তৈরি। ভালো কন্টেন্টই আপনার ব্র্যান্ডকে পরিচিত করতে পারে, দর্শকদের আকৃষ্ট করতে পারে এবং বিক্রয় বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। এজন্য কন্টেন্ট হতে হবে আকর্ষণীয়, তথ্যসমৃদ্ধ ও গ্রাহকদের সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম।

 মূলত তিন ধরনের কন্টেন্ট শেখা দরকার— টেক্সট, ইমেজ, এবং ভিডিও। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সঠিক পদ্ধতিতে শেখা ও চর্চা করলে দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব।

টেক্সট কন্টেন্ট

লিখিত কন্টেন্ট তৈরির দক্ষতা গড়ে তুলতে নিয়মিত চর্চা করা জরুরি। এ জন্য—

  • লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন – প্রতিদিন একটি ছোট ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট বা ক্যাপশন লিখুন।
  • রিসার্চ করুন – গুগলে সার্চ করে বিভিন্ন টপিক নিয়ে পড়ুন ও নোট নিন।
  • এআই টুল ব্যবহার করুন – ChatGPT ও Deepseek এর মতো টুল দিয়ে লেখা বিশ্লেষণ করুন ও উন্নত করুন।
  • বিরতি দিয়ে সম্পাদনা করুন – প্রথমে লিখে ফেলুন, পরে দেখে ভুল সংশোধন করুন।

ইমেজ কন্টেন্ট

ইমেজ কন্টেন্ট তৈরি করতে হলে ডিজাইন ও এডিটিং শেখা প্রয়োজন। এজন্য—

  • কপিরাইটমুক্ত ইমেজ সংগ্রহ করুন – Unsplash, Pexels, Pixabay-এর মতো ওয়েবসাইট থেকে ইমেজ নামিয়ে কাস্টমাইজ করুন।
  • Canva ও Photoshop শিখুন – Canva দিয়ে সহজেই ডিজাইন করা যায়, আর Photoshop দিয়ে পেশাদার লেভেলের এডিটিং শেখা সম্ভব।
  • এআই টুল ব্যবহার করুন – Microsoft AI Image Generator বা DALL·E-এর মাধ্যমে ইমেজ তৈরি ও কাস্টমাইজ করা যায়।

ভিডিও কন্টেন্ট

ভিডিও কন্টেন্টের চাহিদা বাড়ছে, তাই এটি শেখাও গুরুত্বপূর্ণ। শেখার জন্য—

  • পরিকল্পনা করুন – ভালো ভিডিওর জন্য প্রথমে কনসেপ্ট ঠিক করুন ও স্ক্রিপ্ট তৈরি করুন।
  • ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার শিখুন – CapCut, Adobe Premiere Pro, DaVinci Resolve-এর মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্র্যাকটিস করুন।
  • শুটিং ও অডিও সম্পর্কে জানুন – মোবাইল বা ক্যামেরা দিয়ে ভালো ভিডিও রেকর্ড করার কৌশল শিখুন, মাইক্রোফোন ব্যবহার করে অডিওর মান উন্নত করুন।
  • প্রাকটিক্যাল প্রজেক্ট করুন – নিজের জন্য বা ক্লায়েন্টের জন্য ছোট ছোট ভিডিও বানিয়ে অনুশীলন করুন।

টেক্সট, ইমেজ, ও ভিডিও কন্টেন্ট শেখার জন্য ধৈর্য ও নিয়মিত অনুশীলন জরুরি। অনলাইনে প্রচুর ফ্রি রিসোর্স ও টিউটোরিয়াল রয়েছে, যেগুলো দেখে ধাপে ধাপে শেখা সম্ভব। শেখার পর বাস্তবে কাজ করে গেলে দক্ষতা আরও বাড়বে এবং সময়ের সঙ্গে উন্নতি দেখা যাবে।

ধাপ-২: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM) শেখা

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM) হলো ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই পর্যায়ে আপনি শিখবেন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডইন, পিন্টারেস্ট এবং ইউটিউব প্ল্যাটফর্মগুলোর অ্যালগরিদম কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে পোস্ট আপলোড, শেয়ার, চ্যাট ও কমেন্টের মাধ্যমে এনগেজমেন্ট বৃদ্ধি করা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম কীভাবে কাজ করে?

প্রত্যেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব অ্যালগরিদম আছে, যা নির্ধারণ করে কোন পোস্ট কার কাছে এবং কতবার দেখানো হবে। এখানে আপনি শিখবেন—

  • Engagement

পোস্টে বেশি লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার হলে সেটি বেশি মানুষকে দেখানো হয়।

  •  Relevance

একজন ব্যবহারকারী পূর্বে যেসব কন্টেন্ট দেখেছে বা লাইক দিয়েছে, তার ভিত্তিতে নতুন কন্টেন্ট সাজেস্ট করা হয়।

  • Content Type

ভিডিও, ছবি, টেক্সট—সবকিছুর গুরুত্ব আলাদা। ভিডিও পোস্ট সাধারণত বেশি রিচ পায়।

  • Consistency & Timing

নিয়মিত এবং সঠিক সময়ে পোস্ট করলে অ্যালগরিদম সেটিকে বেশি মানুষকে দেখায়।

এই বিষয়গুলো বোঝার মাধ্যমে আপনি দক্ষভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে ও এনগেজমেন্ট বাড়াতে পারবেন।

ফেসবুক (Facebook) মার্কেটিং শেখা

  • লগো,কাভার ফটো ও ব্র্যান্ড নাম দিয়ে ফেসবুক পেজ তৈরি করা।
  • আকর্ষণীয় ছবি বা ভিডিও সহ পোস্ট তৈরি করা।
  • সংক্ষিপ্ত কিন্তু তথ্যবহুল ক্যাপশন লেখা।
  • সপ্তাহে অন্তত ৩-৫টি পোস্ট করা।
  • ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে পোস্ট শেয়ার করা।
  • সঠিক সময়ে শেয়ার করলে পোস্টের রিচ বাড়বে।
  • দ্রুত এবং বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কমেন্ট ও মেসেজের উত্তর দেওয়া।
  • এনগেজমেন্ট বাড়ানোর জন্য কমেন্টের মাধ্যমে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া।
  • হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের কৌশল শেখা।
  • ফেসবুক ইনসাইট দেখে পেজের গ্রোথ বৃদ্ধি করা। 

ইনস্টাগ্রাম (Instagram) মার্কেটিং শেখা

  • হাই-কোয়ালিটি ছবি, রিলস ও IGTV কন্টেন্ট তৈরি করা।
  • হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের কৌশল শেখা (#DigitalMarketing #InstagramGrowth)।
  • নিয়মিত স্টোরি আপলোড করা।
  • নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে ও স্টোরিতে পোস্ট শেয়ার করা।
  • অন্যদের কন্টেন্ট শেয়ার করা ও ট্যাগ করা।
  • ইনস্টাগ্রামে দ্রুত রিপ্লাই দিলে পোস্ট বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে।

লিঙ্কডইন (LinkedIn) মার্কেটিং শেখা

  • পেশাদার কন্টেন্ট তৈরি করা (অভিজ্ঞতা, কেস স্টাডি, টিপস)।
  • ছবি ও ইনফোগ্রাফিকস যুক্ত করা।
  • ভিডিও কন্টেন্ট পোস্ট করা।
  • নিজের প্রোফাইল ও কোম্পানি পেজে পোস্ট শেয়ার করা।
  • নেটওয়ার্কের সাথে পোস্ট শেয়ার করে আলোচনায় অংশ নেওয়া।
  • পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কমেন্টের উত্তর দেওয়া।
  • ইনবক্সে দ্রুত ও বিনয়ী উত্তর দেওয়া।

পিন্টারেস্ট (Pinterest) মার্কেটিং শেখা

  • আকর্ষণীয় ও ইনফরমেটিভ ইমেজ বা ইনফোগ্রাফিক তৈরি করা।
  • বোর্ড তৈরি করে পিন সাজানো।
  • নিয়মিত নতুন পিন পোস্ট করা।
  • অন্যান্য পিন শেয়ার করা এবং নিজের পিন শেয়ার করা।
  • ব্লগ বা ওয়েবসাইট থেকে পিন শেয়ার করা।
  • পিনে আসা কমেন্টের উত্তর দেওয়া।

ইউটিউব (YouTube) মার্কেটিং শেখা

  • আকর্ষণীয় থাম্বনেইল এবং SEO-ফ্রেন্ডলি টাইটেল ব্যবহার করা।
  • ৩-১০ মিনিটের ভিডিও তৈরি করা, যাতে দর্শক ধরে রাখা যায়।
  • সপ্তাহে অন্তত ১-২টি ভিডিও আপলোড করা।
  • ভিডিও লিংক সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা।
  • ব্লগ বা ওয়েবসাইটে এম্বেড করা।
  • ভিডিওতে আসা কমেন্টের উত্তর দেওয়া।
  • দর্শকদের সাথে ইন্টারঅ্যাকশন বাড়ানোর জন্য কমেন্টে প্রশ্ন রাখা।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শেখার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট আপলোড, শেয়ার, চ্যাট ও কমেন্টের মাধ্যমে ব্র্যান্ডের উপস্থিতি বাড়ানো যায়। অ্যালগরিদম বুঝে নিয়মিত কন্টেন্ট পোস্ট ও গ্রাহকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করলেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ে সফল হওয়া সম্ভব। 

ধাপ-৩: সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) শেখা

SEO (Search Engine Optimization) শেখা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা আপনাকে অর্গানিক ট্র্যাফিক আনতে সহায়তা করে। সঠিক SEO কৌশল অনুসরণ করলে আপনার ওয়েবসাইট গুগলে শীর্ষে আসবে, ফলে দীর্ঘমেয়াদে সেল জেনারেট করা সহজ হবে। এটি শুধু ট্র্যাফিক বাড়ায় না, বরং আপনার ব্যবসাকে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। নিয়মিত SEO অপটিমাইজেশন করলে অনলাইন ও অফলাইন উভয় ধরনের ব্যবসার দৃশ্যমানতা বাড়ে এবং প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে থাকা সম্ভব হয়। তাই যারা দীর্ঘমেয়াদী সফলতা চায়, তাদের জন্য SEO শেখা অপরিহার্য।

SEO শেখার জন্য তিনটি প্রধান বিষয় ভালোভাবে বুঝতে হবে—

কিওয়ার্ড রিসার্চ শেখা

কিওয়ার্ড রিসার্চ হলো এমন শব্দ বা বাক্য খোঁজা, যা মানুষ গুগলে সার্চ করে।

  • কীভাবে Google Keyword Planner, Ahrefs, Ubersuggest দিয়ে কিওয়ার্ড খোঁজা যায়।
  • কীভাবে লো কম্পিটিশন এবং হাই সার্চ ভলিউম কিওয়ার্ড নির্বাচন করা হয়।
  • কীভাবে লং-টেইল কিওয়ার্ড ব্যবহার করে সহজে র‍্যাংক করা যায়।

অন-পেজ SEO শেখা

অন-পেজ SEO হলো ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট এবং স্ট্রাকচার অপটিমাইজ করা, যাতে এটি গুগলের পছন্দমতো হয়।

  • কন্টেন্টে প্রাথমিক (Primary) এবং সেকেন্ডারি (Secondary) কিওয়ার্ড সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
  • SEO-ফ্রেন্ডলি URL, টাইটেল, মেটা ডিসক্রিপশন তৈরি করা।
  • H1, H2, H3 হেডিং ট্যাগ ব্যবহার করা।
  • ইমেজ অপটিমাইজেশন (Alt Text ব্যবহার)।
  • ইন্টারনাল লিঙ্কিং ও এক্সটার্নাল লিঙ্কিং করা।

অফ-পেজ SEO শেখা

অফ-পেজ SEO হলো ওয়েবসাইটের বাইরের কার্যক্রম, যা ওয়েবসাইটের অথরিটি (DA) বাড়ায়।

  • ব্যাকলিংক তৈরি (Guest Post, Forum Posting, Profile Backlink)।
  • সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ারিং কৌশল।
  • লোকাল SEO এবং GMB (Google My Business) অপটিমাইজেশন।

টেকনিক্যাল SEO শেখা

টেকনিক্যাল SEO হলো ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এবং মোবাইল ফ্রেন্ডলি অপটিমাইজেশন।

  • ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড বৃদ্ধি করা।
  • মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন নিশ্চিত করা।
  • XML Sitemap ও Robots.txt ফাইল সেটআপ করা।

SEO শেখার জন্য বেশি বেশি প্র্যাকটিস করুন এবং বিভিন্ন SEO টুল ব্যবহার করে এক্সপেরিমেন্ট করুন। এছাড়াও নিয়মিত সার্চ ইঞ্জিনের আপডেট সম্পর্কে খোজখবর রাখা।  

ধাপ-৪: পে-পার-ক্লিক (PPC) শেখা

PPC (Pay-Per-Click) হল একটি ডিজিটাল বিজ্ঞাপন কৌশল যেখানে বিজ্ঞাপনদাতারা প্রতি ক্লিকের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করেন। এটি দ্রুত ট্র্যাফিক পাওয়ার জন্য অত্যন্ত কার্যকর এবং ব্যবসাকে লাভজনক করতে পারে। যারা ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান, তাদের জন্য PPC শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Facebook Ads শেখা

  • কীভাবে Facebook Ads Creative তৈরি করতে হয়। 
  • কীভাবে Facebook Audience Targeting করা হয় (লোকেশন, বয়স, আগ্রহ অনুযায়ী)।
  • কীভাবে Engagement Ads, Message Ads, Page Promotion Ads তৈরি করতে হয়।
  • কীভাবে Facebook Pixel ব্যবহার করে ওয়েবসাইট ভিজিটরদের রিটার্গেট করা যায়।

Google Ads শেখা

  • কীভাবে Google Search Ads, Display Ads, YouTube Ads কাজ করে।
  • কীভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ করে সঠিক কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হয়।
  • কীভাবে CPC (Cost-Per-Click) নির্ধারণ করা হয়।
  • কীভাবে A/B টেস্টিং করে বিজ্ঞাপন উন্নত করা যায়।

PPC শেখার জন্য নিয়মিত প্র্যাকটিস করুন এবং Google Ads ও Facebook Ads ম্যানেজার ব্যবহার করে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন!

ধাপ-৫: ইমেইল মার্কেটিং শেখা

ইমেইল মার্কেটিং হল ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম শক্তিশালী এবং প্রত্যক্ষ যোগাযোগ মাধ্যম। এটি ব্যবসায়িক গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, বিক্রয় বৃদ্ধি এবং ব্র্যান্ড লয়ালটি তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যারা ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান, তাদের অবশ্যই ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে জানা দরকার।

ইমেইল কালেকশন কৌশল

একটি কার্যকর ইমেইল ক্যাম্পেইনের জন্য আগে একটি শক্তিশালী ইমেইল লিস্ট তৈরি করতে হয়।

  • Lead Magnet ব্যবহার করে ইমেইল সংগ্রহ (ফ্রি ই-বুক, ডিসকাউন্ট, ওয়েবিনার ইত্যাদি অফার করে)।
  • Opt-in Form ডিজাইন করা যাতে গ্রাহক সহজেই ইমেইল দিতে পারেন।
  • GDPR ও CAN-SPAM আইন মেনে ইমেইল সংগ্রহ করা।
  • Pop-ups এবং Landing Page-এর মাধ্যমে ইমেইল সাবস্ক্রিপশন বাড়ানো।
  • বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে ইমেইল সংগ্রহ করা।

ইমেইল টেমপ্লেট ডিজাইন

ইমেইল টেমপ্লেট আকর্ষণীয় হলে গ্রাহকরা ইমেইল খুলবে এবং ক্লিক করবে।

  • ইমেলের এর ছবি ও টেক্সট সুন্দরভাবে ডিজাইন করা।
  • রেসপন্সিভ টেমপ্লেট তৈরি করা, যা মোবাইল ও ডেস্কটপ উভয় প্ল্যাটফর্মে ভালো দেখায়।
  • Call-to-Action (CTA) বাটন যুক্ত করা, যা গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট অ্যাকশন নিতে উৎসাহিত করবে।

ইমেইল ক্যাম্পেইন পরিচালনা

ইমেইল মার্কেটিং সফল করতে হলে ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ।

  • Welcome Emails – নতুন গ্রাহকদের স্বাগত জানানো।
  • Promotional Emails – ছাড় বা নতুন অফার প্রচার করা।
  • Newsletter Emails – নিয়মিত তথ্য ও আপডেট পাঠানো।
  • Drip Campaigns – স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট সময়ে ইমেইল পাঠানো।
  • Re-engagement Emails – নিষ্ক্রিয় গ্রাহকদের সক্রিয় করা।

ইমেইল এনালিটিক্স ও অপটিমাইজেশন

ইমেইল মার্কেটিং সফল করতে হলে প্রতিটি ক্যাম্পেইনের ফলাফল বিশ্লেষণ করা জরুরি।

  • Open Rate – কতজন ইমেইল খুলেছে।
  • Click-Through Rate (CTR) – কতজন লিংকে ক্লিক করেছে।
  • Conversion Rate – কতজন গ্রাহক একশন নিয়েছে।
  • Bounce Rate – যেসব ইমেইল ডেলিভারি হয়নি।
  • A/B টেস্টিং- ভিন্ন ভিন্ন টেমপ্লেট, সাবজেক্ট লাইন, CTA পরীক্ষা করে সেরা কৌশল বের করা।

নিয়মিত চর্চা করুন। ইমেইল ক্যাম্পেইন পরিচালনার জন্য Mailchimp টুল ব্যবহার করুন। 

ধাপ-৫: ডিজিটাল মার্কেটিং টুলস শেখা

ডিজিটাল মার্কেটিং দক্ষভাবে পরিচালনা করতে হলে বিভিন্ন টুলস সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক টুল ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি সহজেই SEO, সোশ্যাল মিডিয়া পরিচালনা, বিজ্ঞাপন তৈরি, ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ, ইমেইল মার্কেটিং এবং ডিজাইনিং দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।

এই ধাপে, আমরা জনপ্রিয় ডিজিটাল মার্কেটিং টুলসগুলোর ব্যবহার শিখবো এবং কীভাবে এগুলো আপনার মার্কেটিং কৌশলকে আরও কার্যকর করতে পারে, তা জানবো।

Canva – ইমেজ ও গ্রাফিক ডিজাইন টুল

  • সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ডিজাইন
  • ইউটিউব থাম্বনেইল তৈরি
  • মার্কেটিং ব্যানার ও পোস্টার তৈরি

Meta Ads – ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন টুল

  • ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে টার্গেটেড অ্যাড ক্যাম্পেইন পরিচালনা
  • বিজ্ঞাপনের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ
  • বিভিন্ন অডিয়েন্স সেগমেন্ট তৈরি

Google Ads – গুগল বিজ্ঞাপন টুল

  • Google Search, Display ও YouTube অ্যাড চালানো
  • Keywords Targeting এবং Bidding Strategy
  • বিজ্ঞাপন কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ

Semrush – SEO ও কিওয়ার্ড রিসার্চ টুল

  • প্রতিযোগীদের ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ
  • কিওয়ার্ড রিসার্চ ও র‍্যাংকিং ট্র্যাকিং
  • ওয়েবসাইট SEO অডিট

Ubersuggest – কিওয়ার্ড ও SEO বিশ্লেষণ টুল

  • কিওয়ার্ড রিসার্চ এবং সার্চ ভলিউম বিশ্লেষণ
  • প্রতিযোগীদের কন্টেন্ট ও ব্যাকলিঙ্ক বিশ্লেষণ
  • ওয়েবসাইটের SEO পারফরম্যান্স যাচাই

Ahrefs – ব্যাকলিঙ্ক ও SEO অডিট টুল

  • ব্যাকলিঙ্ক বিশ্লেষণ
  • কনটেন্ট এক্সপ্লোরার ব্যবহার করে ট্রেন্ডিং টপিক খুঁজে বের করা
  • ওয়েবসাইটের SEO সমস্যা খুঁজে বের করা

Google Analytics – ওয়েবসাইট পারফরম্যান্স ট্র্যাকিং টুল

  • ওয়েবসাইটের ভিজিটর ট্র্যাকিং
  • কাস্টমার বিহেভিয়ার বিশ্লেষণ
  • কনভার্সন রেট উন্নয়ন

Google Search Console – সার্চ ইঞ্জিন পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ টুল

  • ওয়েবসাইটের ইনডেক্সিং চেক
  • সাইট ম্যাপ সাবমিট করা
  • কিওয়ার্ড পারফরম্যান্স ট্র্যাক

WordPress – ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ম্যানেজমেন্ট টুল

  • ওয়েবসাইট তৈরি ও পরিচালনা
  • SEO ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট পাবলিশ
  • প্লাগিন ব্যবহার করে ওয়েবসাইট ফিচার বাড়ানো

Mailchimp – ইমেইল মার্কেটিং ও অটোমেশন টুল

  • ইমেইল ক্যাম্পেইন তৈরি
  • অটোমেটেড ইমেইল পাঠানো
  • সাবস্ক্রাইবার ম্যানেজমেন্ট

Hootsuite – সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট টুল

  • একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া একসাথে পরিচালনা
  • পোস্ট শিডিউলিং
  • সোশ্যাল মিডিয়া এনালিটিক্স

প্রতিদিন একটু একটু করে চর্চা করুন, বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করুন এবং দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটার হয়ে উঠুন

উপসংহার

ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত নতুন ট্রেন্ডস, অ্যালগরিদম আপডেট এবং টুলস আসছে, তাই আপনাকে নিয়মিত আপডেট থাকতে হবে।

উপরের রোডম্যাপ অনুসরণ করে ধাপে কন্টেন্ট তৈরি, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM), সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO), পে-পার-ক্লিক (PPC), ইমেইল মার্কেটিং এবং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং টুলস সম্পর্কে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন। এছাড়াও

  • প্রয়োজনীয় স্কিলস শিখুন
  • প্র্যাকটিক্যাল কাজ করুন
  • সময় ব্যবস্থাপনা করুন

এই তিনটি বিষয় ঠিকমতো অনুসরণ করলে আপনি একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার হতে পারবেন! 

About The Author